ড. আব্দুর রাজ্জাক (ভোলা) (টাঙ্গাইলের রাজনীতিবিদ) এর জীবনী

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক কে তার নিজের গ্রামের অনেকেই ভোলা বলে ডাকে । তাঁর ডাক  নাম ভোলা । ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ১৯৫০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলার মুশুদ্দিতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা : মো. জালাল উদ্দিন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি গবেষণা বিভাগে চাকরি করতেন । তাঁর মাতা : রেজিয়া খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী । তাঁর স্ত্রী শিরীন আক্তার বানু । ড. আব্দুর রাজ্জাক দুই পুত্র রেজুয়ান শাহ্রিয়ার সুমিত, সজিত ও এক কন্যা সন্তানের জনক ।
ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক  ( ভোলা )


তাঁর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ।
১৯৯৫ সালে তিনি ধনবাড়ি নওয়াব ইন্সটিটিউট থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাশ করেন । ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৭১ সালে বিএসসি ( এজি ) পাশ করেন । ১৯৭২ সালে তিনি কৃষিতত্বে এম এস সি ( এজি ) ডিগ্রি লাভ করেন । পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাস্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন ।

এছাড়াও তিনি বেশ কিছু উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন । যুক্তরাস্ট্রের
ইস্ট এনজেলিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মিং সিস্টেম রিসার্চ,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের অধীনে ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট, জাইকার ব্যবস্থাপনায় জাপানে স্ট্র্যাটেজিস ফর সাসটেইনেবল এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ নানা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত মেথডোলজিক্যাল গাইড লাইন্স ফর ফার্মিং সিস্টেম রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ শীর্ষক বইয়ের রচয়িতাদের মধ্যে তিনিও একজন । ২৫টিরও বেশি জার্নালে তার গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে । এছাড়াও বেশ কিছু ম্যাগাজিনে তার কৃষি বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ।

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের কর্মজীবন শুরু হয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল  (বি.এ.আর.সি) তে একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে । এ প্রতিষ্ঠান তিনি মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন । পেশাগত কারণে তিনি অনেক দেশে সফর করেছেন ।

 তিনি মূলত স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন । ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে ৬ দফা ও ১১ দফা ভিত্তিক গণ আন্দোলনে অংশ নেয়। এতে অংশ নেয়ার জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয় । ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় কার্যকরি পরিষদেরও সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। অসাধারণ নেতৃত্বগুণ, কর্তব্যপরায়নতা, নিষ্ঠাগুণে আজ তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন সফল ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত (৩ মেয়াদে) কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।

ছাত্রজীবন থেকেই ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক নিজ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ১৯৬৯ সালে নিজ গ্রাম মুশুদ্দিতে প্রগতি সংঘ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ ক্লাবের মাধ্যমেই তার নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালে মধুপুর-ধনবাড়ি এলাকার প্রথম শ্রেণীর বিদ্যাপীঠ মুশুদ্দি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলের নাম মুশুদ্দি আফাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় । তিনি তাঁর মায়ের নামে একটি কলেজও স্থাপন করেছেন মুশুদ্দিতে । কলেজের নাম হচ্ছে : মুশুদ্দি রেজিয়া কলেজ । ধনবাড়িকে একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ছিলো। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ১৯৯৮ সালে ধনবাড়িতে থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০১ সালে উপজেলা স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। থানা প্রতিষ্ঠায় ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় মুশুদ্দি ইউনিয়ন গোপালপুর থেকে ধনবাড়ি উপজেলার সাথে সংযুক্ত হয়। অবহেলিত ধনবাড়ি এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা করার দাবি তুলে ধরেন। বর্তমানে ধনবাড়ি পূর্ণাঙ্গ উপজেলায় পরিণত হয়েছে।

তিনি অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পেশাজীবী ও সামাজিক সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত। ১৯৯৬-৯৭ সালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন ও প্রকৃচির মহাসচিব ছিলেন। ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক আমেরিকান সোসাইটি অব অ্যাগ্রোনমি, ক্রপ সাইন্স সোসাইটি অব আমেরিকা, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর দা অ্যাডভান্সমেন্ট অব সাইন্স (বি.এ.এ.এস), বাংলাদেশ এগ্রোনমি সোসাইটি, বাংলাদেশ হর্টিকালচার সোসাইটি ও বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনস্ এর সদস্য।

তিনি ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ি) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় সংসদের কৃষি মন্ত্রণালয় ও অনুমিত হিসাব সংক্রান্ত দু‘টি স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ৬ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান এবং সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দশম জাতীয় সংসদে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।

তিনি খেলাধুলা অনেক পছন্দ করেন । প্রায় প্রতিবছরই তিনি তাঁর গ্রামে ফুটবল খেলার আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন ।

0 Response to "ড. আব্দুর রাজ্জাক (ভোলা) (টাঙ্গাইলের রাজনীতিবিদ) এর জীবনী "

Post a Comment

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel